শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪১ অপরাহ্ন
এম. কে. রানা, অথিতি প্রতিবেদক:নামেই আধুনিক নৌ-বন্দর। প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বরিশাল আধুনিক নৌ-বন্দর ভ্রাম্যমান হকারদের দখলে থাকায় আধুনিকতার সুবিধাবঞ্চিত যাত্রী সাধারণ। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে মাসোয়ারা দিয়ে দিনের পর দিন বন্দরের ভেতরে বাইরে অবৈধভাবে ব্যবসা চালিয়ে গেলেও কর্তৃপক্ষ তা দেখেও না দেখার ভান করছেন। লোক দেখানো উচ্ছেদ অভিযান চালালেও ভাসমান হকারদের দৌড়াত্ম্য বন্ধ হচ্ছেনা।
সংশ্লিষ্টদের কঠোর নজরদারী না থাকায় দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র আধুনিক বরিশাল নৌ-বন্দরে আধুনিকতার কোন সুবিধা পাচ্ছেন না এখান দিয়ে যাতায়াতকারী যাত্রী সাধারণ। বন্দর সংশ্লিষ্টরা একে অপরের ঘারে দোষ চাপিয়ে বিষয়টি এরিয়ে যাচ্ছেন। কেউবা আবার বন্দর দখলের বিষয়টি হাস্যকর বলে উড়িয়ে দিচ্ছেন। আর ভোগান্তি পোহাচ্ছে যাত্রী সাধারণ।
প্রায় সপ্তাহকালব্যাপী বরিশাল নৌ-বন্দরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভাসমান দোকান আর হকারদের দখলে রয়েছে বরিশাল লঞ্চঘাট। চা,পান বিড়ি-সিগারেট সহ বাহারী পণ্যের পশরা সাজিয়ে বসে আছে হকাররা। ফলে যাত্রী সাধারণের চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হয়। এদিকে দোতলা লঞ্চ টার্মিনালেও একই চিত্র দেখা যায়। এসব হকাররা মাসের পর মাস পল্টুন দখলে রেখে ব্যবসা চালিয়ে গেলেও তা উচ্ছেদে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেন না সংশ্লিষ্ট কেউ। তবে ব্যতিক্রমও দেখা যায় মাঝে মাঝে। বিশেষ করে নৌ-মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী কিংবা কোন ভিভিআইপি বন্দর পরিদর্শনে আসলে তখন খুব তৎপরতা চালান তারা।
পরিচয় গোপন রেখে পল্টুনের একাধিক হকারের সাথে আলাপকালে তারা জানান, কর্তৃপক্ষকে টাকা দিয়ে ব্যবসা করেন তারা। নির্দিষ্ট লোক এসে প্রতিদিন ১০০ টাকা নিয়ে যায়। টাকা না দিলে লাথি মেরে ফেলে দেয় আমাদের। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন হকার বলেন, কোন মন্ত্রীর আসলে আমাদেরকে আগে-ভাগে সংবাদ দিয়ে দুই একদিনের জন্য দোকান বন্ধ রাখতে জানিয়ে যান তারা। ঝালকাঠী থেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘাটে আসা চাঁদপুরগামী যাত্রী ফয়েজ আহম্মেদ বলেন, চাঁদপুরের লঞ্চ ঘাটে আসবে রাত ৯টার দিকে। তবে আগে ঘাটে চলে আসায় এখানে অপেক্ষা করছি। কিন্তু স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে হকারদের উৎপাতে বসে থাকা দায়।কেননা বিভিন্ন শ্রেনীর হকাররা এসে অশ্লীল কথা-বার্তা বলে। আরেক যাত্রী বলেন, আধুনিক নৌ বন্দর হলেও আধুনিকতার কোন সুযোগ এখানে আমরা পাইনা।
এ ব্যাপারে বরিশাল সদর নৌ-থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মোঃ বেল্লাল হোসেন বলেন, হকারদের কাছ থেকে চাঁদা তোলার বিষয়টি তিনি অবগত নন। তবে এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নিবেন তিনি বলে জানান। হকার উচ্ছেদের ব্যাপারে কোন চিঠি পেয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এ ধরণের কোন চিঠি এখন পর্যন্ত আমরা পাইনি।
এ ব্যাপারে বরিশাল বিআইডব্লিউটিএ’র যুগ্ম পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোস্তাফিজুর রহমানের দৃষ্টি আকর্ষন করলে তিনি বলেন, নৌ-পুলিশের এসপি’র নেতৃত্বে আমরা হকার উচ্ছেদে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলাম। তাতে করে আমাদেও বিরুদ্ধে মিছিল, মিটিং পর্যন্ত করেছে। হকার্স লীগের পরিচয় দিয়ে হকারদের উচ্ছেদে বাধা দেয় আমাদের। হকার্স এসোসিয়েশন কিংবা হকার্স লীগের কোন নেতার পরিচয় তিনি জানাতে পারেননি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার নিজস্ব কোন গার্ড নেই, আনসার নেই। আর পল্টুন দেখাশোনার দায়িত্ব আমাদের নয়। এটা দেখার জন্য আরেকজন যুগ্ম পরিচালক আছেন তিনি দেখেন। তিনি আরো বলেন, আমরা হকার উচ্ছেদ করলে অনেক সময় উপর মহল থেকে সুপারিশ আসে। তিনি বলেন, মন্ত্রী কিংবা কোন উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এখানে আসলে পল্টুন পরিস্কার রাখা আমাদেরই দায়িত্ব।
অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন বরিশালের যুগ্ম পরিচালক রফিকুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি এ প্রতিবেদককে প্রশ্ন করেন, আপনি কি জানেন ইচ্ছে করলেই সংবাদ প্রচার করা যায়না, এতে মামলা হতে পারে। চাঁদার বিষয়টি উল্লেখ করতেই বলেন, এটা হাস্যকর ব্যাপার। তিনি বলেন, এগুলো আমার দেখার বিষয় না। এগুলো নৌ-পুলিশ ও পোর্ট অফিসারের দেখার কথা। তবে আমার চোখে পড়লে আমি হকারদের এখান থেকে চলে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দেই।
এ ব্যাপারে বরিশাল জেলা প্রশাসক মো. অজিয়র রহমান বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। সাধারণ যাত্রীদের কোন ধরণের সমস্যা হোক এটা কাম্য নয়। হকারদের কাছ থেকে চাঁদা নিয়ে পল্টুনে বসতে যারা দেন তারা যে সিন্ডিকেটেরই হোক না কেন তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Leave a Reply